খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ছাত্রদের উপর অমানুষিক নির্যাতন, কুয়েটের সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে দুই মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’ছাত্রকে মরধরের অভিযোগে সাবেক ভিসি এবং দৌলতপুর থানার সাবেক ওসিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। রোববার মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো: রাকিবুল ইসলাম অভিযোগটি গ্রহণ করে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য খানজাহান আলী থানাকে নিদের্শ দিয়েছেন।

দু’মামলার আসামিরা হলেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আলমগীর হোসেন। এছাড়া তৎকালীন প্রফেসর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ড. সোবহান মিয়া, সাবেক রেজিষ্টার জি এম শহীদুল ইসলাম, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাফায়েত হোসেন নয়ন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও সাবেক ছাত্রলীগ সেক্রেটারী আলী ইমতিয়াজ সোহান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কমি মো: আসাদুজ্জামান, আ,ই,এম ডিপার্টমেন্ট রুদ্রনীল সিংহ শুভ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মি আল ইশমাম, আই ই এম ডিপার্টমেন্ট৯ এইচ এম তানভীর রেজওয়ান সিদ্দিক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মি রেশাদ রহমান, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপামেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মি তরিকুল তিলক, পরিমল কুমার, আলী ইবনুল সনি, তারিক আহমেদ শ্রাবণ, দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদীরা হলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ ও বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্র। তারা নিয়মিত নামাজ কালাম পড়তেন।

বাদী মাহদী হাসান তার এজাহারে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু হলে থাকতেন তিনি। ২০১৭ সালের ১ মে রাত পৌনে ১২ টার দিকে ১৫ তম ব্যাচের ছাত্র তাশরিফ সালেহ (রাহুল) ও মাশরুর আলম কৌশিকসহ আরও পাঁচজন দরজার কড়া নাড়তে থাকে। ঘুম থেকে দরজা খুলে দিলে তারা ডেকে নিয়ে হলের গেষ্ট রুমে ডেকে নেয় তাকে। সেখানে গিয়ে আরও দু’জন নাইম ও রুম্মনকে ধরে আনা হয়। নাইম ও রুম্মনের সাথে তিনি দৌলতপুর একটি কোচিং সেন্টারে একসাথে পড়াশুনা করত। পরে জানতে পারেন ওই কোচিং সেন্টারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার নাম দৌলতপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন শিবির সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার জি এম শহীদুলের কাছে জমা দিয়েছে।

তখন রেজিষ্ট্রার জি এম শহীদুল ইসলাম, সাবেক ভিসি ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ও ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক ড. সোবাহন মিয়া পরামর্শ করে মাহদী হাসানসহ তালিকায় ছাত্রদের নির্যাতন করার জন্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়ন এবং আলী ইমতিয়াজ সোহানকে তালিকা প্রদান এবং নির্দেশ প্রদান করেন।

মামলায় আরো বলা হয়, গেষ্টরুমে মাহাদীকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নাইমকে কিভাবে চিনি বলে। এর পরপরই শুরু হয় নির্যাতন। আসামি সাদমান নাহিয়ান সেজান কিল এবং ঘুষি মারতে থাকে। পরবর্তীতে লাঠি, ষ্টাম্প এবং রড় দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করতে থাকে। তাদের আঘাতে বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়লে মৃত ভেবে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে সাবেক ভিসি ও সাবেক রেজিষ্ট্রারের নির্দেশে খানজাহান আলী থানার পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায় এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নাশকতা মামলা দায়ের করে।

অপর মামলার বাদী লুৎফর রহমান, লালন শাহ হলের ছাত্র ছিলেন। এজাহারে উল্লেখ করেন, সাব্বির নামে একজন রুমমেট ছিল তার। তিনি রাজনৈতিক মামলায় দৌলতপুর একটি কোচিং সেন্টার থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি জানতে পারেন ওই কোচিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার নাম থানার ওসি কুয়েট রেজিষ্ট্রারের নিকট জমা দিয়েছেন। ওসির দেওয়া তালিকার ছাত্রদের নির্যাতন করার জন্য সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়নকে তালিকা সরবরাহ এবং নির্দেশ প্রদান করেন।

মামলায় আরো বলা হয়- ২০১৭ সালের ১ মে রাত ১০ টার দিকে তাকে কুয়েট লালন শাহ হলে ডেকে নেওয়া হয়। আসামি সাফায়েত হোসেন নয়ন বাদীকে বলে তুমি শিবির কর। অস্বীকার করার সাথে সাথে অপর আসামি আলী ইমতিয়াজ সোহান তার গালে চড়, ঘুষি এবং কিল মারতে থাকে। নির্যাতন রাত ৪ টা পর্যন্ত চলতে থাকে।

জানতে চাইলে বাদী পক্ষের আইনজীবী মো: শফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, কুয়েটের হলের গেষ্টরুমগুলো ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হত। ছাত্রলীগের মতের বিরুদ্ধে গেলে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসত।

তিনি আরো বলেন, বাদী মাহদী ও লুৎফর নিয়মিত নামাজ কালাম আদায় করত। ছাত্রলীগ সদস্যদের মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় ছাত্র শিবির আখ্যায়িত করে সেদিন তাদের অমানবিক নির্যতন করা হয়েছিল। পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে। তাদের আঘাতে বাদী লুৎফর রহমানের একটি কিডনী নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে।

শফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, রোববার তারা দু’জন আদালতে অভিযোগ করেছেন। আদালত তাদের অভিযোগটি গ্রহণ করে মামলা রেকর্ড করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য খানজাহান আলী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!